আল হাছিব তাপাদার::
ভারতের শিলংয়ের তীর নামক জুয়া খেলায় বিদ্ধ হয়ে পড়েছে সীমান্তঘেঁষা জকিগঞ্জ উপজেলা। তীর খেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার উঠতি বয়সী যুবকরা বিপথগামী হচ্ছে। নিঃস্ব হচ্ছেন অতিলোভী নি¤œ আয়ের লোকজন। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এ খেলায় জড়িয়ে নিজেকে ধংস করে দিচ্ছে। সীমান্তঞ্চলে তীর খেলা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ভারতীয় তীর খেলার কারণে অনেক পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগে আছে। সুখের সংসারে অশান্তির আগুন।
খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে ভারতীয় তীর নামক জুয়ায় বিদ্ধ এক পরিবার। প্রায় ৫ বছর আগে এই পরিবারের আকাশের (ছন্দনাম) সাথে বিয়ে হয় সুনাবানের (ছন্দনাম)। দুটি সন্তানও রয়েছে তাদের। বিয়ের চার বছর পর সুনাবানের স্বামী আকাশ ব্যবসা ছেড়ে সহজ উপায়ে ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। জড়িয়ে পড়েন ভারতীয় তীর খেলায়। কিন্তু লাভ তো হয়না। আকাশ প্রতিদিন তীর খেলার টিকেট কিনে টাকা খোয়ে এসে শশুড় বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে স্ত্রী সুনাবানের উপর চালান নির্যাতন। নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে একাধিকবার দরিদ্র বাবার কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে জুয়াড়ি স্বামীকে টাকাও এনে দিয়েছেন। এরপরও থামেনি নির্যাতন। দুই মেয়েকে নিয়ে প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হয় সুনাবানকে। তার সুখের সংসারের শান্তি কেড়ে নিয়েছে ভারতীয় ‘তীর’ খেলা। নাম না প্রকাশের শর্তে এমন করুণ পরিণতির কথা জানান এক গৃহবধু।
এমন অশান্তির আগুন শুধু সুনাবান-আকাশের পরিবারেই নয়। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জের শত শত পরিবারে অশান্তি নেমেছে ‘তীর’ খেলার জন্য। পাশাপাশি এলাকায় বেড়েছে চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম। তীর খেলার টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে অনেক সময় সংঘর্ষেও রূপ নিয়েছে। যুব সমাজকে বাঁচাতে তীর খেলার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জকিগঞ্জ কৃষক শ্রমিক উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে টানানো হয়েছে ব্যানার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘তীর’ নামক এ জুয়া খেলা প্রতিদিন ৩ বার অনুষ্ঠিত হয় ভারতের শিলংয়ে। সর্বনি¤œ ১০ টাকা থেকে শুরু করে যে কোনো পরিমাণ টাকার টিকিট কেনা যায় এ খেলায়। ১০ টাকার টিকিটে জয়ী হলে ৭০০ টাকা পাওয়া যায়। এ জুয়ার বোর্ডে ১০০টি নম্বর থাকে। যে যত খুশি নম্বর ক্রয় করতে পারে। টিকিট কিনে স্থানীয় এজেন্ট বা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয়। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, য্বুকসহ নি¤œ আয়ের মানুষের মধ্যে এ জুয়া খেলার চাহিদা বেশী। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা দিয়ে অনেকে একাধিক নম্বর ক্রয় করেন।
এ জুয়া খেলার টিকিট বিক্রি হয় জকিগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে, জকিগঞ্জ ইউনিয়নের থানাবাজার, ভরণ, বাবুর বাজার, সুলতানপুর ইউপির গঙ্গাজল, কামালগঞ্জ, শরিফগঞ্জ, খলাছড়া ইউনিয়নের মাদারখাল, ভূইয়ারবাজার, ঈদগাহ বাজার, বিরশ্রী ইউনিয়নের মাসুমবাজার, বরাইরতল, বারহাল ইউনিয়নের শাহবাগ, শাহগলী বাজার, ঘাটের বাজার, কাজলসার ইউনিয়নের আটগ্রাম, মানিকপুর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারসহ আশপাশ বিভিন্ন এলাকায়।
অন্য ব্যবসার আড়ালে টিকেট বিক্রি ও লেনদেন মোবাইলের মাধ্যমে হওয়ায় পুলিশ অনেকটা জুয়াড়ীদের কাছে অসহায়। মাঝেমধ্যে গোপন তথ্যে অভিযান চালিয়ে একাধিকজনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলেও এ আইনের সাজার পরিমান কম হওয়ায় জুয়াড়ীরা জেল থেকে বেরিয়ে আবার জুয়া খেলার নেটওয়ার্ক তৈরী করে। অপরদিকে অভিযোগ রয়েছে, র্যাব, পুলিশ ও ডিবির কথিত সোর্সরা এ জুয়াড়িদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা আদায় করে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বখরার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার জকিগঞ্জ টুডে টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, তীর খেলার অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেই। জুয়াড়ীদের কাছ থেকে আইন শৃংখলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে কেউ বখরা আদায় করার তথ্য প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তীর খেলার লেনদেন মোবাইলের মাধ্যমে হওয়ায় পুলিশ অপরাধীদের সনাক্ত করতে অনেকটা কষ্ট হয়। এরপরও গোপন তথ্যে আমরা জুয়াড়ীদের সনাক্ত করে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ দিন।
Leave a Reply